শান্ত বণিক, নরসিংদী থেকে: নরসিংদীতে জেলা পর্যায়ে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর আলোকে জেলায় সরকারি দায়িত্বাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালা সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) মো. সেলিম রেজা। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। প্রশিক্ষণে জেলার সরকারি দপ্তরের ৭০ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. সেলিম রেজা বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ভালো কাজ করতে হবে। কাজ কখনো বেঈমানী করে না, কাজের মূল্যায়ন একদিন না একদিন হবেই। আসুন দেশটাকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলি। তথ্য অধিকার আইন সমাজের জন্য, জনগণের জন্য একটি রক্ষাকবচ। যে কোনো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কার্যালয়, অধিদফতর, পরিদফতর, বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড, পরিকল্পনা, সেবা ইত্যাদি সম্পর্কে যদি কোনো নাগরিক কোনো বিষয়ে তথ্য জানতে চায়, তাহলে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সে তার চাহিত তথ্য পেতে পারে। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করতে হবে। প্রশাসনের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য ব্যবহারের সংস্কৃতিতে এটি একটি নতুন মাত্রা। এ নতুনত্ব ধারণ করার দায়িত্ব এ সমাজেরই। এখন প্রয়োজন প্রযুক্তির নতুনত্বের সঙ্গে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করা। আর এ পরিবর্তন আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করবে। আসুন আমরা তথ্যসমৃদ্ধ হই। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করি তথ্য গ্রহণ করি। তথ্যের আলোয় নিজেদের সমৃদ্ধ করি। তথ্য অধিকার আইনটি একটি অগ্রসর আইন। বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে যতটা এগিয়েছে, এ আইন তার চেয়ে আগানো। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তথ্য অধিকার প্রয়োগের মাধ্যেমে একটা তথ্যভিত্তিক উন্নয়ন সম্ভব। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের দেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশ এখন বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এখন স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও কাজ করছি। আমরা উন্নয়নের পথে সফলভাবে এগিয়ে চলেছি। দেশের উন্নয়ন যেন স্থায়ী হয় এবং এর সুফল যেন দেশের মানুষ পায়, সে লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে চলেছে। কোন অঞ্চলে কী উৎপাদন হয় তার ভিত্তিতে কিভাবে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে ভাবছে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা হচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে, জনগণ ঘরে বসে সেবা পাচ্ছে। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে দেশ আরো দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, দেশে অনেক আইন রয়েছে। সবগুলি আইন সরকার জনগণের উপর প্রয়োগ করে। একমাত্র তথ্য অধিকার আইন জনগণ সরকারের উপর প্রয়োগ করে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে গড়িমসি করলে চলবে না। তিনি আরো বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তথ্য প্রাপ্তির অধিকার ভোগ করার জন্য নামমাত্র মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে একজন নাগরিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পেয়ে থাকে। তাতে পুরো প্রশাসনযন্ত্র পুরো জবাবদিহিতার মধ্যে চলে আসে। যে কোনো সময় যে কোনো নাগরিক যে কোনো অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাইতে পারে এবং পেতে পারে। এতে তথ্য লুকানোর সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। তথ্যের অংশীদারত্বে নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারছি। তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই তথ্য না দেওয়ার যে সংস্কৃতি সমাজে তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে এসে তথ্য প্রদানের মনোভাব তৈরি করতে হবে। তথ্যের জন্য আবেদনকারী এবং তথ্য প্রদানে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাঝে মেলবন্ধন থাকতে হবে। নরসিংদী জেলা প্রশাসন তথ্য অধিকার আইনকে অধিক কার্যকর ও জনগণের জন্য ফলপ্রসূ করে তুলতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। তাই রাষ্ট্রের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার অধিকার জনগণের আছে। প্রশাসনের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে আমরা কাজ করছি। তথ্য জনগণকে ক্ষমতায়িত করে। যে জাতি যত তথ্য জানবে, সে জাতি তত উন্নতি লাভ করবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা হলে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে স্বভাবিকভাবেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। আমাদের দেশের জনগণের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটছে। দেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক অগ্রসর হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ড. এটিএম মাহবুব উল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুষমা সুলতানা সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মী।